নিজস্ব প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে দিনরাতে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায় ও কোম্পানিতে।যার ফলে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকায় নির্মিত পাকা রাস্তাগুলো। প্রায় মাস খানেক যাবত উপজেলার শতাধিক ইটভাটায় ও বিভিন্ন কোম্পানীতে দিনে রাতে মাটি কেটে ট্রাক্টর বোঝাই দিয়ে পাচার করে আসছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় খননযন্ত্র (এক্সভেটর) দিয়ে ফসলি জমির মাটি অবাধে কেটে নেয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, এতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাদেশ্বর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও এলাকায় কৃষি জমির মাটি নেয়ার ফলে কয়েক গ্রামের একমাত্র রাস্তাটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না মাটি তোলার কাজ। শুধু দিনেই নয় রাতের আধারেও মাটি কাটছে একদল মাটি খেকো সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।সমান তালে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালুও।
এদিকে মিরপুর ইউনিয়নের মহাশয়ের বাজারের দত্তপাড়া গ্রামের আশ্রায়ন প্রকল্পের পাশে মরা খোয়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে একদল বালু খেকো। ওই বালু মিরপুর টু মহাশয়ের বাজার সড়কের উপর দিয়ে যাওয়ার ফলে হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি ভেঙ্গে জনগণের চলাচলের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে শুধু বালুই নেয়া হচ্ছে না,যাচ্ছে ফসলি জমির মাটিও।
উপজেলার কান্দিগাও, শাহপুর ও নিজগাঁও গ্রামের এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে তিন-চার ফুট গভীরতায় ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রাক ও ট্রাক্টর বোঝাই করে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কয়েক গ্রামের মানুষ রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারী) সকালে মাটিকাটা বন্ধের দাবীতে রাস্তায় দাড়িয়ে মানববন্ধন করেছে। তারা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাটি ও বালু খেকোরা বীরদর্পে মাটি নিয়ে যাচ্ছে,এতে যেমনি ভাবে ভাঙ্গছে সরকারের কোটি কোটি টাকায় নির্মিত পাকা রাস্তা,তেমনিভাবে আমাদের ছেলে মেয়েরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে স্কুল কলেজে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তারা আরও বলেন এদের যন্ত্রনায় আমরা কয়েকটি গ্রামের মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছি।
খননযন্ত্রের চালক আইয়ূব আলী জানান, এসব মাটিগুলো পাশেই নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, জমির মালিকেরা মাটি বিক্রি করছেন, তারা এক বিঘা জমির মাটির দাম নিচ্ছেন ১৫ হাজার টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাটি বিক্রেতা একাধিক ব্যক্তি জানান,ধান চাষে লাভবান নয় কৃষকরা-তাই তাঁরা নিজের জমির মাটি বিক্রি করছেন।
পূর্ব জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা রশিদ মিয়া বলেন, ‘মানুষে জমিনের মাটি বেচিয়া বাড়ির কিনারে হাওর বানাইরা।’ এদিকে পুটিজুরী স্নানঘাট রোডের দক্ষিণপার্শে হরিরামপুর মৌজার একটি হাওরের ফসলি জমি থেকে দিনে ও রাতের আধারে মাটি কেটে উপজেলার বিভিন্ন কোম্পানীতে বিক্রি করছে একটি চক্র। এতে যেমন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানুষ চলাচলের রাস্তাটিও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘ফসলি জমির উপরিস্তরের ছয় ইঞ্চি গভীরতায় মাটি কেটে নিলে উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায় । এর পর যে মাটি থাকে তাতে ফলন ভালো হয় না।এতে প্রতিবছর ১ থেকে ২ শতাংশ আবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হবিগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বলেন, জমির মালিক মাটি বিক্রি করলে আইনিভাবে তাঁদেরকে কিছু করার নেই।
বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহুয়া শারমিন ফাতেমা জানান, মাটি ও বালু খেকোদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অভ্যাহত আছে, গত কিছু দিন আগে একজনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। আজ শুনলাম তারা আবার মাটি কেটে নিচ্ছে এ বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব এবং এলাকাবাসীকে পরামর্শ দিয়েছি চিহ্নিত মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য।