হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বিদেশে লোক পাঠিয়ে দেশ – বিদেশে প্রতারনা ও লোক জিম্মি রেখে পরিবারের লোকজনকে চাপ সৃষ্টি করে লাখ – লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি দালাল চক্র। ওই চক্রটি এলাকার সহজ – সরল লোকজনকে বিদেশে মোটা অংকের টাকায় চাকরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই নিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়।
এতেকরে অসহায় পরিবারের লোকজন তাদের পরিবারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় বাড়ি ও জায়গা-জমি বিক্রি করে রাস্তায় বসেছেন। সন্তানকে দেশে আর ফিরিয়ে আনা যাবে কি না এমনকি দালালদের দেয়া টাকা পাওয়া ফিরে পাবে কি-না এনিয়ে চরম হতাশায় পরিবারের লোকজন। এঘটনায় গত ৫ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার একটি দালাল চক্রের অপকর্মের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার বিবরণ জানা যায়, হবিগঞ্জ পৌরসভার অনন্তপুর এলাকার খাঁন জাহান আলী স্বপন (২৩) নামের এক যুবককে দুবাইয়ে চাকরী দেয়ার প্রলোভনে দুবাই নিয়ে ভিসা- একামা লাগিয়ে কাজে দেয়ার কথা বলে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্র।
যুবকের সাথে অসদাচরণের ও অভিযোগ উঠেছে। দালাল চক্রের, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ৪নং পইল ইউপির চেয়ারম্যান সৈয়দ মইনুল হক আরিফের সভাপতিত্বে কয়েক দফা সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সালিশের রায় মেনে নিয়েও দালাল চক্র পরবর্তীতে বিজ্ঞ সালিশানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রর্দশন করে। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে দালালসহ চুনারুঘাটের ৪ প্রতারকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ওই যুবকের মামা মীর আব্দুল কাদির বাদি হয়ে হবিগঞ্জে ৬ জনকে আসামি করে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলাটি আদালত তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। মামলার আসামিরা হলো, চুনারুঘাট উপজেলার রাণীগাঁও ইউনিয়নের পারকুল গ্রামের আব্দুল শহিদ ওরপে শহিদ মিয়ার পুত্র খলিলুর রহমান (৩৫), তার ভাই দুলাল মিয়া (৪০), মৃত আব্দুন নুরের পুত্র শহিদ মিয়া (৬৫), মৃত আব্দুল জব্বারের পুত্র আক্তার মিয়া (৪০), সদর উপজেলার পইল পশ্চিম পাড়া গ্রামের ইলিয়াছ মিয়ার স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (২৮)।
মামলা সূত্রে আরো জানা যায়, খলিলুর রহমান ও দুলাল মিয়া দুই ভাই দুবাই থাকার সুবাদে তাদের পিতা শহিদ মিয়া দেশে লোকজন সংগ্রহ করে আদম পাচার করে থাকেন। বাদীর আত্মীয়ের মাধ্যমে শহিদ মিয়ার সাথে পরিচয় হয়। এদিকে বাদির ভাগ্নে খাঁন জাহান আলী স্বপন বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে আত্মীয়তার সূত্রে আসামিরা বাদিকে প্রস্তাব দেয় তার ভাগ্নেকে ফলের আড়তে প্যাকেটিং এর কাজে দুবাই পাঠাতে পারবে, সেখানে তার মাসিক বেতন হবে ৩৫ হাজার টাকা এবং ভিসার মেয়াদ দুই বছর।
এ জন্য খরচ দিতে হবে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। গত ৫ ও ১১ এপ্রিল দুই দফায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে ১৩ এপ্রিল দুবাই পাঠায় এবং খলিল ও দুলাল তাকে রিসিভ করেন। ১৫ দিন তাদের এখানে রাখার পরও কোনো চাকরির ব্যবস্থা বা কাজ দেয়া হয়নি।
একপর্যায়ে তার ভাগ্নে তাদের চাপ দিলে আসামিরা তাকে ঘর থেকে বের করে দেয় এমনকি অশুভ আচরণ করে। প্রবাসে অসহায় অবস্থায় তার ভাগ্নে রাস্তার পাশে, গাছতলায় থেকে রাত্রী যাপন করতে থাকে। দুবাইয়ে থাকা অন্য প্রবাসী ও পরিচিতজনদের অনুগ্রহে এখনো সে দুবাইয়ে আছে। কিন্তু তাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।
উল্টো গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভিকটিম খাঁন জাহান আলী স্বপনকে বিদেশে চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য পরবর্তীতে দুলাল মিয়া আরো ২ লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু অদ্যাবদি কোনো চাকরির ব্যবস্থা করা হয়নি। আসামিদের নিকট বাদি টাকা ফেরত ও ভাগ্নেকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বললে তারা খারাপ আচরণ করে এবং লেনদেনের কথা অস্বীকার করে।
এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে বাদি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এই চক্রকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন প্রতারণার শিকার অসহায় পরিবারের লোকজন৷