নতুন কুড়িঁ নিউজঃ তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে উত্তরের জেলা নীলফামারী। গত দুই সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। প্রখর রোদে মানুষসহ হাঁসফাঁস করছে পশু-পাখিও। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।
একটু শীতল ছায়া বা এক পশলা বৃষ্টির অপেক্ষায় জেলাবাসী। ভরা বর্ষা মৌসুমেও দুই সপ্তাহ বৃষ্টির দেখা নেই। পানির অভাবে ফেটে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত, নষ্ট হচ্ছে বীজতলা। নিম্ন আয়ের মানুষদের বাধ্য হয়ে কাজে যেতে হচ্ছে। ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
প্রতিদিনই স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।
জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিদিনই শতাধিক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ফলমূলের দাম বেড়েছে। এক জোড়া ডাব ২০০-৩০০ টাকা এবং এক জোড়া আনারস ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি বেড়েছে আখ ও আখের রসের।
আশরাতুন নাহার নামের এক নারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদে ঘাম বসে গিয়ে শরীরে জ্বর এসেছে। ঈদের দুদিন আগে থেকেই জ্বর শুরু হয়েছে। সঙ্গে সর্দি, কাশি।
জ্বর ভালো হওয়ার পরপরই শুরু হয়েছে পাতলা পায়খানা। প্রচণ্ড রোদের কারণে এমনটি হয়েছে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন।
বাপ্পী নামের এক যুবক বলেন, ‘ঈদের দিন প্রচণ্ড রোদ ও গরম ছিল। কোরবানির পর শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। এখন শরীরে অনেক জ্বর ও ব্যথা। ঈদে ডাক্তার না থাকায় হোমিও ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ নিতে বাধ্য হলাম।
মির্জাগঞ্জ এলাকার সুজন বলেন, ‘গরমে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। আবার ঘরে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে। ফ্যানের বাতাসেও শরীর থেকে ঘাম ঝরে পড়ছে। বাইরের অবস্থা তো আরও নাজুক।
ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, প্রতিদিন প্রায় ১০ জনের মতো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বেশিরভাগই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রায়হান বারী জানান, প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে জ্বর লক্ষ্য করা গেছে।
গরমে বাড়ির বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহারের পাশাপাশি চোখে সানগ্লাস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনেই উপজেলা কমপ্লেক্সে জ্বর, কাশি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তীব্র দাবদাহের কারণে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে মানুষজন নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এজন্য ডাবসহ তরল জাতীয় ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ চিকিৎসক।
ডিমলা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার (১১ জুলাই) নীলফামারীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঈদের দিন ছিল ৩৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চলতি সপ্তাহে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।