স্টাফ রিপোর্টঃ হবিগঞ্জের বাহুবল কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিত ওই শিক্ষার্থীকে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে (১৯ আগস্ট) বৃহস্পতিবার মো. হৃদয় মিয়া নামে ওই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী হৃদয় মিয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, এইচএসসি পরিক্ষার ফরম পূরণের কার্যক্রম শুরু হলে মোবাইলে এসএমএস দিয়ে ২০৭০ টাকা পরিশোধের জন্য পরিক্ষার্থীদের জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ।
বোর্ড নির্ধারিত ১০৭০ টাকার স্থলে অতিরিক্ত এক হাজার টাকার ফি এর বিষয় জানতে ১৮ আগস্ট হৃদয় মিয়া কলেজে যান। সেখানে গেলে আরও শিক্ষার্থীসহ হৃদয় মিয়া অধ্যক্ষ এবং কতিপয় শিক্ষকের সাথে আলোচনা করেন।
পরদিন ১৯ আগস্ট সকাল ১১টায় হৃদয় মিয়া এ্যসাইনম্যান্ট আনতে গেলে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ তাকে ডেকে নিয়ে অফিস সহকারীর রুমে আটকে রাখেন এবং অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদ করায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন।
এসময় উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীও তার সাথে অশোভন আচরণ করেন। এছাড়া শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার মাধ্যমে নাজেহাল করে কলেজে না যাওয়ার নির্দেশ দেন। দীর্ঘ তিন ঘন্টা আটকে রাখার পর বেলা ২ টায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে হৃদয় মিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হৃদয় মিয়াকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য অলিউর রহমান ও মো. ফারুক মিয়া চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী হৃদয় মিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান।
জানা গেছে, বাহুবল কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা বোর্ডের দেয়া নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্ধারিত বোর্ড ফি’র অতিরিক্ত এক হাজার টাকা আদায় করছে। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে কলেজ বন্ধ থাকলেও আদায় করা হচ্ছে পরিবহন ফি। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড ফি ৮শ টাকা, কেন্দ্র ফি (ব্যবহারিক সহ) ৩শ ৬০ টাকা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড ফি ৭শ ৭০ টাকা, কেন্দ্র ফি ৩শ টাকা আদায় করার কথা।
সেই অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষার জন্য শুধু বোর্ড নির্ধারিত পরীক্ষা ফি ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বেতন ছাড়া অন্য কোন অর্থ আদায় করতে পারবে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরণ প্যানেল বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। কিন্তু এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাহুবল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষার্থী জয়নুল ইসলাম বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ইনস্টিটিউশন ফি’র নামে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা। যা বোর্ড নির্ধারিত ফি’র প্রায় সমান।
করোনা মহামারির প্রভাবে আমাদের অধিকাংশ পরিবারই মারাত্মক অর্থ সংকটে আছে।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের অনেকের পক্ষেই বোর্ড নির্ধারিত ফি পরিশোধই পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না, তার উপর অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে অনেক অভিভাবক ফি পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আরেক শিক্ষার্থী সাইকুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ১১৬০ টাকা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীর নিকট থেকে ১০৭০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও যথাক্রমে ২১৬০ ও ২০৭০ টাকা নেয়া হচ্ছে। বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি জমা দেয়ার বিষয়ে আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে আমাদের সদোত্তর না দিয়ে উল্টো উক্ত টাকা পরিশোধ না করলে আমাদেরকে এইচএসসি পরীক্ষায় বসতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আমাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী মইন উদ্দিন তালুকদার সাকিব বলেন, কলেজের পক্ষ থেকে আমাদের মাসিক বেতন ১০০ টাকা হারে এবং পরিবহন ফি ৫০ টাকা হারে কয়েক দফায় সর্বমোট ৩ হাজার ৬শত টাকা নেয়া হয়েছে। অথচ ২০২০ সনের ১৭ মার্চ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ ছিল। সকল শিক্ষার্থীরা দুই বছরের মাসিক বেতন বাবদ ২ হাজার ৪শ ও পরিবহন ফি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ১ হাজার ২শ টাকা পরিশোধ করেছি। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবককেই উক্ত টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে চওড়া সুদে ঋণ এবং ক্ষেত্র বিশেষে গরু, ছাগল ও জমিজমা বিক্রি এবং বন্ধক রাখতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাহুবল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রব বলেন, অনলাইনে ফরম পূরণের ক্ষেত্রে বোর্ড যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবেই অর্থ আদায় করছি। তিনটি অংশে অর্থ নেয়া হচ্ছে। একটি অংশ বোর্ড, একটি অংশ কেন্দ্র ও আরেকটি অংশ কলেজের। কলেজের অংশটি প্রতিষ্