আমির হোসেন,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি অনিয়মের অন্ত নেই হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বেশী হাওর বেরীবাধঁ উপজেলা শাল্লা।
গত বছর এ উপজেলায় ১৩৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন পিআইসি বাঁধের বিপরীতে ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি বছর এই উপজেলায় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দ্বিগুন । ১৯৭ টি পিআইসি তৈরি করে প্রায় ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ।
যা প্রকল্পের কাজের সঙ্গে বরাদ্দের অনেক পার্থক্য রয়েছে। শুধু তাই নয় নীতিমালার তোয়াক্কা না করে জমিহীন এবং এই প্রকল্পগুলোর এলাকাতে এক ইউনিয়নের লোক কে অন্য ইউনিয়নে নিয়ে নামে মাত্র প্রকল্পে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড শাল্লার কর্তৃপক্ষ।
প্রকৃত কৃষকদেরকে স্ব স্ব এলাকায় পিআইসি কমিটিতে অর্ন্তভূক্ত না করে অপকর্ম ধামাচাপা দেয়ার জন্য তিনজন নাম সর্বস্ব সাংবাদিককে পিআইসি কমিটি দেয়ায় পুরো উপজেলা জুড়ে রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধের পাশের জমির স্থানীয় কৃষকের অধিকার কেড়ে নিয়ে কৃষক নয় এমন লোকদের পিআইসি দেয়ায় এলাকার কৃষকের মাঝে ক্ষোভ চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে ।
আর এমন অনিয়ম করার পেছনের কারণ হচ্ছে বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যাতে নিরাপদে তাদের যাবতীয় দুর্নীতি অনিয়ম কর্মকান্ড পরিচালনা করতে কোন প্রকার বাধার সম্মুখিন না হন সেইজন্যই এই নাম সর্বস্ব সাংবাদিকদের হাতে পিআইসি কমিটি দেয়া হয়েছে।
এমনই অভিযোগ করছেন হবিবপুর ইউপির মৌরাপুর গ্রামের কৃষকরা। তারা জানান, ২৭ নং ফসল রক্ষা বাঁধটি পড়েছে হবিবপুর ইউপির মৌরাপুর গ্রাম সংলগ্ন ভান্ডাবিল হাওরে। ২৭নং পিআইসির সদস্য সচিব হলেন সাংবাদিক বকুল আহমেদ ।
তার বাড়ি ২০ কিলোমিটার দূরে শাল্লা ইউপির দামপুর গ্রামে। এই প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে আরেক সাংবাদিক শান্ত কুমার তালুকদার। তার বাড়ি হচ্ছে উপজেলার নারকিলা গ্রামে। বাঁধ থেকে তার গ্রামের বাড়ি ৭ কিঃমিঃ দূরে। আরেক প্রকল্পের সদস্য সচিব করা হয়েছে সাংবাদিক বিপ্লব রায় । সে উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের পিতা বরেন্দ্র রায়ের ছেলে। বাঁধ থেকে প্রায় ১৫ কিঃমিঃ দুরে তাদের বসতবাড়ি। অথচ তাদের এক ইঞ্চি জমিও নেই বাঁধের আশেপাশে।
তারপরও কেন তাদের পিআইসি দেয়া হলো জানতে চাইলে এলাকাবাসী জানান তারা ৩ জন নাকি সাংবাদিক। যাতে তারা বাঁধের বিষয়ে কোন প্রকার পত্রপত্রিকায় লেখালেখি না করেন সেজন্য নীতিমালা অমান্য করে গর্তের ভেতরে ইদুর রেখে মুখে মাটি দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে দাবী স্থানীয় কৃষকদের । প্রতি বছর এই বাঁধটি এই তিন সাংবাদিককে অপকর্ম প্রকাশ না করার শর্তে লীজ দেয় কর্তৃপক্ষ। আমরা প্রতিবাদ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না।
জানা যায় প্রতি বছরই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের দুর্নীতি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে প্রকল্প নেয় এই চক্রটি। অল্প ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধে প্রতি বছর নীতিমালা লংঘন করে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ নিয়ে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে তিন সাংবাদিক । তাদের নামে বেনামে রয়েছে একাধিক পিআইসি। বাঁধে বাঁধে গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগও আছে এই তিন সাংবাদিকের তাদের বিরুদ্ধে। এনিয়ে উপজেলাজুড়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
সংবাদকর্মী ওই তিনজন অবস্থান করে শাল্লা সদরে। পেশায় তিন সাংবাদিক যথাক্রমে শান্ত কুমার তালুকদার একজন দলিল লেখক, বকুল আহমেদ তিনি উপজেলা সদরে ছোটখাটো চা-পান ও সিগারেটের দোকান দিয়ে কোনভাবে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন, আরেক সাংবাদিক বিপ্লব রায় এক সময় সুনামগঞ্জে পত্রিকায় কাজ করতেন। এখন একটি অনলাইন টেলিভিশন ও পত্রিকায় দোহাই দিয়ে তিনি গেল দুই তিনবছরে ফসল রক্ষা বাধেঁর কাজ নিয়ে টাকা কামিয়ে এখন শাল্লা উপজেলা সদরে ফার্মেসীর ব্যবসা খুব জমিয়েছেন।
কৃষক নয় এমন ব্যক্তিদের যে বা যারা পিআইসি দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের।
উপজেলার ভান্ডাবিল হাওর উপ প্রকল্পের আওতায় ২৭নং পিআইসির বাঁধে কোনো সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ভান্ডাবিল হাওরের নতুন বৈশাখালি ভাঙা হতে ১৪৬ মিটার অক্ষত বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪লাখ ৯৭হাজার ৮শ’ ৩২টাকা ৫৫ পয়সা।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ এইসব নামধারী সাংবাদিকদের ভান্ডাবিল হাওরে কোনো জমিই নেই। অথচ প্রকৃত সুবিধাভোগী কৃষকদের বাদ দিয়ে দুর্নীতিকে আড়াল করতে সাংবাদিকদের ওই পিআইসি দেওয়া হয়েছে বলে জানান হবিবপুর ইউপির বাঁধ সংলগ্ন মৌরাপুর গ্রামের কৃষকরা।
এ ব্যাপারে মৌরাপুর গ্রামের সঞ্জয় চন্দ্র দাস বলেন, এক সময়কার দলিল লেখক শান্ত দাসের বাড়ি নারকিলা, চা বিক্রেতা বকুল আহমেদের বাড়ি শাল্লা ইউপির দামপুর ও বিপ্লব রায়ের বাড়ি আনন্দপুর গ্রামে। এই হাওরে এদের কোন জমিন নাই।
একেক জনের বাড়ি বাঁধ থাইক্কা ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। এরা সবাই থাকে ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারে। শুনছি হেরা নাকি সাংবাদিক। এদের বাঁধও টেকসই হয় নাই, কাজও বাকি রইছে। বানডা ( বাঁধ) এখনই ডেইল্লা পইরা গেছে গা। এখন বৃষ্টি হইলেই বানডা ভাইঙা যাইব গা। এরার যেখানে জমিন নাই, এরাতো নিজের মত কইরা টাকা বাছানোর জন্য সবাই বানডা ভালা করত না। এরা পিআাইসি পায় কীভাবে এমন প্রশ্ন করেন ওই কৃষক। ভান্ডাবিল হাওরের ২৬নং পিআইসির সদস্য রবীন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, তারা যে পিআাইসি আনছে তাদের তো একগুটা জমি নাই এই হাওরে।
আমাদের ২৬নং পিআইসির মধ্যে একটু অংশে তাদের ঢুকাই দিছে। আমাদের ২৬নং পিআইসির ৭২৮ মিটার বাঁধে বরাদ্দ দিছে মাত্র ২০লাখ ৫৪ হাজার টাকা আর তাদের মাত্র ১৪৬ মিটারে বরাদ্দ দিছে ২৫ লাখ টাকা। আমরা গরীব মানুষ কিছু মাছ টাস মাইরা খাই। এরার বিরুদ্ধে কিছু কইতে গেলেই পুলিশ পাঠাইয়া আমাদের হয়রানি করে।
আমাদের অনেক ক্ষতি করছে এরা। মানুষ অখন ডরাইয়া এরার বিরুদ্ধে কিছু কইত চায় না। এরার বাঁধে মাত্র ৪ লাখ টাকার মাটি কাটছে বলে জানান তিনি।একই গ্রামের অশুক চন্দ্র দাস বলেন, প্রতিবাদ করতে গিয়া চড় খাইতাম নি।
এখন যদি পাইন্যে ঢেক্কা দেয় পইলা আমার ক্ষেত তলে যাইব। কইবার যায়গা নাই। কানবারও জায়গা নাই।