নতুন কুড়িঁ নিউজ” হবিগঞ্জে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে থাকা অসুস্থ্য রোগীদের প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে চলছে ভয়ঙ্কর প্রতারণা। গা শিউরে উঠার মত ঘৃন্যতম একাজের সাথে জড়িত খোদ সরকারি হাসপাতালেরই কর্মচারী। বিষয়টি রীতিমত ভাবিয়ে তুলছে সচেতন মহলকে।
জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের অসাধু একটি চক্র ভূয়া প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট দিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন বহু সেবাপ্রার্থী মানুষ। একাধিক ভুক্তভোগীর এ সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি অনুসন্ধান শুরু করেন এ প্রতিবেদক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হন জনৈক নারী। পরদিন মঙ্গলবার সকালে তাকে এস.জি.পি.টি (এ.এল.টি) টেস্ট করার পরামর্শ দেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। সে অনুযায়ী ওই নারীর ভাই নাহিজ মিয়া (ছদ্ম নাম) হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ তুহিন চৌধুরীর কাছে যান। এ সময় তুহিন তাকে জানান, ওই টেস্ট হাসপাতালে হয় না। নাহিজ এ বিষয়ে পরামর্শ চাইলে হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান সুমনের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি।
তার কথামতো সুমনের সাথে যোগাযোগ করেন নাহিজ। সুমন তাকে জানান, ৩ শত টাকা দিলে তিনি তা প্রাইভেট কোন হাসপাতাল থেকে করে এনে দিবেন। সরল বিশ্বাসে তাকে টাকা দেন নাহিজ।
এরই মাঝে এ প্রতিবেদকের সাথে দেখা হয় নাহিজের। পরে পরিচয় গোপন করে সুমনের কাছ থেকে রিপোর্ট আনতে যান সন্দেহপ্রবণ এ প্রতিবেদক। এ সময় হাসপাতালের সরকারি প্যাডে লিখিত একটি রিপোর্ট দেন সুমন।
হাসপাতালে-তো এ টেস্ট হয় না, তাহলে কি করে রিপোর্ট দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, ‘আধা ঘন্টা পরে আসেন, মূল রিপোর্ট দেয়া হবে।’ পরে হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন হাসপাতাল এলাকার ‘দি স্কয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার’র প্যাডে লিখিত রিপোর্টের একটি কপি দেন তিনি। যাতে ওই টেস্টের রেজাল্ট দেখানো হয়েছে ‘৩৬.২ ইউ/এল ইউনিট।
কিন্তু এতে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় এ প্রতিবেদকের। তাৎক্ষনিক রিপোর্টটি নিয়ে দি স্কয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেল ফাঁস হয় প্রতারণার ভয়ানক তথ্য।
স্কয়ার’র এম.ডি শামীম আহমেদ সাফ জানিয়ে দেন এটা তার প্রতিষ্ঠানের নয়। কেউ তার প্যাড জালিয়াতি করেছে। এ বিষয়ে তিনি লিখিত একটি প্রত্যায়নপত্রও দেন এ প্রতিবেদককে। পরে ওই রোগীকে একই টেস্ট পূনরায় করানো হয় চাঁদের হাসি হাসপাতালে। কিন্তু মাত্র ২ ঘন্টার ব্যবধানে এবার রেজাল্ট আসে ‘২৪.০০ ইউ/এল ইউনিট ।
বিষয়টি নিয়ে ওইদিনই কথা হয় হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকারের সাথে। তিনি সবকিছু দেখে অবাক হন এবং ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
একাধিক ভুক্তভোগী ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের জনৈক কর্মচারী জানান, শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ানদের যোগসাজশে এ চক্রটি দীর্ঘিদন ধরে এমন প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা বিভিন্ন হাসপাতালের নাম ব্যবহার করে মনগড়া রিপোর্ট সরবরাহ করে থাকে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা ফাঁস হয়। পরে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে একাধিক হাসপাতাল মালিক ও টেকনিশিয়ানের হাজতবাস হয়েছে।
এদিকে, হাসপাতালের ল্যব ইনচার্জ তুহিন চৌধুরী জানান, সুমনের এ ধরণের কাজ করা উচিত হয়নি। অফিস থেকে শাসানো হয়েছে। অফিসের নির্দেশে ভুক্তভোগীর টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। আশাকরি ভবিষ্যতে আর এমন হবে না।