বাহুবল প্রতিনিধিঃ শিক্ষাই গড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আর এই প্রজন্মই আগামীতে নেবে রাষ্ট্র, ব্যবসা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চালানোর দায়িত্ব। কিন্তু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কী শিখছে আমাদের সন্তানরা? শিক্ষার মূল লক্ষ্য যখন হয়ে দাঁড়ায় অর্থ আয়ের ধান্দা, বাড়ে মেধাহীনদের রাজত্ব, চলে দুর্নীতির গ্রাস, তখন সেখানে ধস নামতে বাধ্য। দিনে দিনে দেশের শিক্ষার মান নিম্নগামী। ফলে সবার অজান্তে গড়ে উঠছে আধাশিক্ষিত এক প্রজন্ম, যা পুরো জাতির জন্য এক অশনিসংকেত।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় অনিয়মের মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চুক্তি ভিত্তিক প্রশ্ন পত্র দিয়ে পরীক্ষা চলছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের মেধাবী শিক্ষকরা জানান, সরকারের শিক্ষা মন্ত্রলায়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বাহুবল উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও শাহজালাল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আদর্শ বিদ্যানিকেতন, মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, ভাদেশ্বর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নব দিগন্ত কেজি এন্ড হাই স্কুল সহ উপজেলার কয়েকটি ম্যাধমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮ -১২ টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যম্যে নিষিদ্ধ গাইড কোম্পানির তৈরি করা প্রশ্নে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছে।
একই প্রশ্নে বাহুবল উপজেলার কয়েকটি স্কুলে ভিন্ন সূচীতে পরীক্ষা নেয়ায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় বিপাকে পড়েছে এসব বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
গতকাল এ ঘটনা চারদিকে জানাজানি হলে সমালোচনার ঝড় বইছে সচেতন মহলে।।
মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ ও শাহজালাল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা চলাকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণলায়ের কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এই সিন্ডিকেট চক্রের তৈরি প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হলেও বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষার সময় সূচী ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। এর ফলে সকল শ্রেণির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি স্থানীয় অবিভাবকদের মাঝে জানাজানি হলে অবিভাবকদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক অবিভাবক অভিযোগ করে জানান, সিন্ডিকেট পরিচালিত বিদ্যালয়ের পরীক্ষার সূচীর মধ্যে মিল না থাকায় নির্ধারিত পরীক্ষার দুই দিন আগেই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সে সব বিষয়ের প্রশ্ন পড়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। এর ফলে চরম বিপাকে পড়েছে এ সব বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
এসব বিদ্যালয়ের অবিভাবকরা আরো জানান, বাহুবল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই প্রভাবশালী প্রধান শিক্ষকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যম্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে একেক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার সূচী ভিন্ন ভিন্ন তারিখে নির্ধারণ করে বিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এর ফলে কোচিং করা শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ করে জানান, অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষায় মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে জুন ৭ তারিখে গণিত পত্র পরীক্ষা সম্পন্ন হয় অথচ জুন ১১ তারিখে একই প্রশ্নে শাহজালাল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গণিত পত্র পরীক্ষা নেওয়া হয় । শাহজালাল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ জুন তারিখে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পত্র সম্পন্ন হয় অথচ ১২ জুন তারিখে একই প্রশ্নে মিরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পত্র পরিক্ষা নেওয়া হয় ।
উপজেলার এই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের বাইরে থাকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মোটা অকের টাকার বিনিময়ে সরকারের নিয়ম ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া এবং স্কুলে কোচিং ব্যবসা করে উপজেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা শুন্য করে দিচ্ছে অপরদিকে অবিভাবকরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাহুবল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আসাদুজ্জামানের মুঠো ফোনে একাধিক বার ফোন দিলে ফোন রিসিভ করা হয়নি ।
এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি আমি অবহিত হয়েছি। এ বিষয়ে তিনি দ্রুত দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।