কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় পরকীয়া দেখে ফেলায় পাঁচ বছরের শিশু ফাহিমা হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ঘাতক লাইলি আক্তার। এ ঘটনায় ফাহিমার বাবাসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন লাইলি। বাকি চার আসামি বর্তমানে চার দিনের রিমান্ডে আছেন।
তারা হলেন- ঘাতক বাবা আমির হোসেন, রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন ও সোহেল রানা। তাদের সবার বাড়ি দেবিদ্বার পৌর এলাকার চাপানগর গ্রামে। দেবিদ্বার থানার ওসি আরিফুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জবানবন্দিতে লাইলি জানান, গত ৫ নভেম্বর লাইলি ও আমিরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে আমিরের শিশুকন্যা ফাহিমা।
এরপর সে মাকে সব বলে দেবে জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। পরে লাইলি ও আমির উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ফাহিমা যদি ঘটনা বলে দেয় তাহলে লাইলির সংসার ভেঙে যাবে। তাই ফাহিমার মুখ বন্ধ করতে আমিরের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন লাইলি।
চাপের মুখে ৬ নভেম্বর রাতে ইমনের ফার্নিচারের দোকানে গিয়ে টাকার বিনিময়ে রবিউল আউয়াল ও সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে ফাহিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আমির। তাতে সায় দেন লাইলি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী পরেরদিন সকালে ছুরি ও দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগ সংগ্রহ করেন আমির। পরে বিকেলে ফাহিমাকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যান তিনি।
সোহেলের সিএনজিতে করে অন্য আসামিরাসহ ফাহিমাকে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে সন্ধ্যায় দেবিদ্বার মাছুয়াবাদ ডোন এলাকার গোমতীর চরের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।
সেখানে লাইলির উপস্থিতিতে আমির প্রথমে এক হাতে মেয়ের মুখে চেপে ধরে অন্য হাতে ছুরি দিয়ে তাকে আঘাত করে।
ইমন ছুরি দিয়ে ফাহিমার পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে, সোহেল ছুরি দিয়ে পেছন থেকে ফাহিমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে। আর রবিউল শিশু ফাহিমার যৌনাঙ্গ টেনে ছিড়ে ফেলে এবং পেটে ছুরি চালিয়ে বিৃকত করে।
সবশেষে ফাহিমার ঘাড় ভেঙে মৃত্যু নিশ্চিত করেন লাইলি। ঘটনাস্থলের পাশে হঠাৎ লোকজনের চলাচল আঁচ করতে পেরে তারা দ্রুত ফাহিমার লাশ দুটি বাজারের প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে রওনা দেন। পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমিরের বাড়ি থেকে স্ত্রী ফোন করে জানান ফাহিমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ কথা শুনে আমির স্ত্রীকে বলেন দ্রুত বাড়ি আসছি। এরপর আমির সিএনজিতে ফাহিমার বস্তাবন্দি লাশ নিয়ে চাপানগর এলাকা বাড়ির কাছে লাইলিকে নামিয়ে দেন। পরে ঈমনের বাড়ির একটি ড্রামের মধ্যে ফাহিমার লাশ লুকিয়ে রাখেন আমির।
পরদিন ফাহিমা নিখোঁজ জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। সেই সঙ্গে তারা লাশ গুম করার জন্য নির্জন জায়গা খুঁজতে থাকেন।
এভাবে ঘাতকরা দুদিন পার করে ৯ নভেম্বর রাতে শিশুটির লাশ সিএনজিতে করে এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসারই এলাকার একটি সরকারি খালে ফেলে আসে।