মোঃ ফিরোজ আহমেদ,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: শস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে এবার আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও সার ও বীজের সংকট না থাকায় উপজেলার প্রতিটি মাঠে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক। প্রতিটি মাঠে মাঠে এখন কৃষকেরা রোপা আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায় কৃষক ও মজুররা দলবদ্ধ ভাবে বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।কিছু কিছু জায়গায় ধান কাটছে অটোমেটিক ধানমাড়াই মেশিনে।
চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি বাজারে ধানের দাম বেশী থাকায় কৃষকরা বেশ উৎফুল্লতার সাথে ধান কাটা- মাড়াই কাজ দিন রাত চালিয়ে যাচ্ছে।
আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহি আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের চান্দের বিল মাঠে ধান কাটার সময় দমদমা গ্রামের কৃষক মো.মকছেদ জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড -৭৫ জাতের ধান রোপণ করেছিলেন তারা বিঘা পতি ২২ থেকে ২৪ মণ হারে পাচ্ছেন। আর বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১২ শত ৫০ টাকায় থেকে ১৪ শত ৮০ টাকা৷ পর্যন্ত। তিনি আরো জানান ধানের এমন দাম পাওয়া গেলে তাদের কোন সমস্যাও হবে না।
শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের কৃষক মো.রহমত আলী জানান,তিনি এবার ৭৫ হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ করেছিলেন তাঁর বেশ কিছু জমিতে প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২২ মণ হারে ধান পেয়েছেন। বর্তমানে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় তাঁরা অনেক খুশি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় এবার চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ৬ হাজার ৯শত ৭০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।বন্যা আতঙ্কের কারণে আমন ধান কিছুটা বিলম্ব হলেও এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ তথ্য মতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নের মধ্যে শাহাগোলা,মনিয়ারী,ভোঁপাড়া ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে সর্বাধিক পরিমাণ জমিতে আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য ইউনিয়নের উঁচু জমি গুলোতে আমন ধানের চাষ করেন কৃষকেরা।
এ-সব এলাকার মাঠগুলোতে চাষকৃত আমন ধানের মধ্যে পাইজাম,ব্রি-২৮,হাইব্রিড -৭৫ সহ উচ্চ ফলনশীল অনেক জাতের ধানের চাষ হয়ে থাকে।
অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে পানি আসার ফলে হাজার হাজার কৃষকদের মাঝে আমন চাষ নিয়ে এবার শঙ্কা দেখা দিলেও সম্প্রতি মাঠ থেকে পানি নেমে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে বইছে আনন্দের ঢেউ।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.ইমদাদুল হক জানান,বিশেষ করে অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার,সাশ্রয় পানি সেচ এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময় পরামর্শ দিয়ে এসেছি। এবার উপজেলার কোন মাঠে তেমন পোকার আক্রমণ ছিল না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার জানান, এবার আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও সার ও বীজের সংকট না থাকায় এবং আমন আবাদের শুরু থেকেই কৃষি বিভাগ সার্বক্ষনিক পরামর্শ দেওয়ার কারণে উপজেলার প্রতিটি মাঠে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা তাদের কষ্টের ফসল মাড়াই সু-সম্পন্ন করতে পারলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।