শেখ জাহান রনি, মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের মাধবপুরের মুচি সম্প্রদায়ের রেপতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। জুতা সারাই আর কালি করে যৎসামান্য আয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন মাধবপুরের রেপতি ঋষি। স্ত্রী সন্তান আর মা সহ ৭ জনের সংসারে ঠিকমতো দুবেলা খাবারের যোগান দিতে পারছেন না তিনি। সংসারে অভাব অভিযোগ লেগেই আছে ।
যতোক্ষণ কাজে থাকেন একটা ঘোরের মধ্যে সময় কেটে যায় রেপতির। বাড়িতে গেলেই শুরু হয় অনুযোগ আর অশান্তি। নিয়মিত পত্রিকা পড়েন জুতা সারাইয়ের ছোট্ট দোকানটিতে বসে।
তাকে নিয়ে ভাবার কেউ নেই জানিয়ে তিনি বলেন তার মা যমুনাবালা ঋষি এতোদিন বয়স্ক ভাতা পেতেন কিন্তু তার বয়স ৬২ বছর হয়ে যাওয়ায় কয়েকমাস আগে নিয়মানুযায়ী ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
একটা ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থা হলে অন্তত কিছুটা হলেও উপকার হতো। টিসিবির একটা কার্ড রয়েছে রেপতির। এটা তার খুব একটা কাজে আসছে না বলে জানান তিনি।
রেপতি ঋষির বাড়ি মাধবপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গানগর গ্রামে। বসতবাড়ির ১ শতাংশ জমি ছাড়া তার আর কোনো সহায় সম্বল নেই। সংসারে স্ত্রী,৪ মেয়ে আর মা সহ সদস্য রয়েছেন ৭ জন। বড় মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত বয়সে পৌঁছালেও অর্থাভাবে বিয়ে দিতে পারছেন না। বাকিরাও প্রাথমিকের গন্ডি পার হতে পারেনি।
সকাল সন্ধ্যা মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড লাগা প্যাভমেন্টে বসে জুতা সারাই ও কালি (জুতা রং)র কাজ করেন রেপতি।সারাদিন খুব একটা কাজ জুটে না। অলস সময়ে বসে পত্রিকা পড়েন। পত্রিকা পড়া তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। সকালে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে আসার পথেই পত্রিকা এজেন্টের কাছ থেকে একটা পত্রিকা নিয়ে আসেন রেপতি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন। ভালো খবরে উচ্ছসিত হন। মন্দ খবর পড়ে বিমর্ষ ও বিষাদগ্রস্ত হন। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থাকলেও অল্প বয়সে পিতৃহারা হয়ে আর পড়তে পারেন নি।
রেপতি জানান, দিনের শেষে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। অসুখে বিসুখে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। ঋণ করতে হয়। ঋণ শোধ করতে গিয়ে সংসারের অনটন আরো বাড়ে।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বকুল চন্দ্র ঋষি রেপতি ঋষির দূর্দশার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ‘রেপতিকে আমরা সাধ্য অনুযায়ী সহায়তা করতে চেষ্টা করি। তবে পৌরসভায় ভিজিডি কার্ড দেওয়ার সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে সরকারীভাবে যদি কোন সুযোগ-সুবিধা আসে তার বিষয়টি খেয়াল রাখবো।