আকিকুর রহমান রুমন: হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার একটি ইউনিয়ন থেকে ৩ দিনে ৩ টি ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করার খবর পাওয়া যায়।থানা পুলিশ উপজেলা সদরের ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়ন থেকে ২জন নারী ও ১ জন যুবকসহ ৩ টি ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন।
গত ৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার)রায়ের পাড়া(সাজি বাড়ির)রুপেন রায়ের বাড়ি থেকে তার স্ত্রী অর্পি(২৬)এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন থানা পুলিশ। পরে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরন করেন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানাযায়,রুপন রায় স্হানীয় গ্যানিংগঞ্জ বাজারে(নতুন বাজার)একটি ফার্মেসী সহকারী হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
তিনি সিলেটে বিয়ে করেছেন বলেও জানান তারা।
তাদের দাম্পত্য জীবনে ৪ বছর বয়সী হৃদিমান নামের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
তবে কি কারনে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন এর কারণ জানাতে পারেননি বা রুপন রায়ের পরিবারের লোকজনের কাছ থেকেও জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে ৬ নভেম্বর (বুধবার)দক্ষিণ যাত্রাপাশা বড় বাড়ির মসজিদ এর পাশের বাঁশ ঝাড়ে গোপাল ঋষি(১৮)এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ।
জানাযায়,গোপাল সেলুনের কাজ করতো এবং তার বাড়ির পাশেই ভাঙার পাড় নামক স্হানে একটি মার্কেটে নিজস্ব একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা করে আসছিলো। সে মুসি বাড়ির বট্টুস ঋষির পুত্র।
বেশ কিছুদিন ধরে গোপালকে জ্বিনে ধরেছে বলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বলে পরিবারের লোকজন জানান।
এমনকি প্রায়ই কেমন আচার আচরণ করতো এবং ঘরের বাহিরেও থাকতো বলে জানাযায়।
এই দিন সকালে পথচারী তার লাশটি ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরন।
সর্বশেষ গতকাল ৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) শরিফখানী পূর্ব হাঁটির উমান প্রবাসী মহিবুর রহমান মিয়ার বাড়ি থেকে তার স্ত্রী’র ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেন থানা পুলিশ।
জানাযায়,দীর্ঘদিন ধরে তার স্বামী উমানে বসবাস করে আসছেন।
তাদের পরিবারে ৩ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
এছাড়াও ২য় তলা বিশিষ্ট বাড়িতে মহিবুর রহমানের স্ত্রী রীমা আক্তার ও তার ৩ বছর বয়সী শিশু কন্যাকে নিয়ে ২য় তলায় বসবাস করতেন।
নিচ তলায় ভাড়াটিয়াগন বসবাস করতো বলেও জানাযায়।
এদিকে রীমা লাশ উদ্ধারের পর থানা পুলিশ, এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানাযায়, সকাল ১০টার পরেও তাকে দেখেছেন। কিন্তু স্বামী মহিবুর রহমান এর কাছে তার বোনদের বেশকিছু পাওনা টাকা নিয়ে একটু ঝামেলা চলে আসছিলো। অন্যদিকে মহিবুর রহমান তার স্ত্রীর একাউন্টে কয়েক লক্ষ টাকা পাঠান।
আর এই টাকা থেকে তার নিকট পাওনাদের দেওয়ার জন্য বলতেন। গতকালও টাকা নিয়ে উভয়ের মধ্যে ফোনে আলাপ আলোচনা হওয়ার কথাটিও শুনা যায়। রীমা আক্তার আমাদের ভাই ও তার স্বামীর এসব জমা টাকা থেকে তার পিতার বাড়িতে দিয়ে দিছেন মহিবুর রহমান এর বোনদের পক্ষ হতে এমনটাই অভিযোগ ছিলো।
এনিয়েও দন্ধ হতো প্রায় সময়ই।
মহিবুর রহমান এর শশুর বাড়ি হলো উপজেলা সদরের ৩নং দক্ষিণ পূর্ব ইউনিয়নের জাতুকর্ন পাড়ার যোগী(হাটি)।
তিনি মেরাজ আলী ও সাহিদা বেগমের কন্যা রীমাকে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেন।
এই টাকা নিয়ে স্বামী ও পিতা মাতার সাথে ফোনে ঝগড়া হওয়ার বিষয়টিও মৃত্যুর দিনও লুক মুখে শুনা যাচ্ছিলো।
রীমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশের খবর পেয়ে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কবির হুসেন এর নেতৃত্বে এসআই জাহাঙ্গীর মিয়াসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার লোকজনের সামনে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী লাশটি ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেন।
পরে গতকাল ডাক্তার সংকট হওয়ার কারনে লাশের ময়না তদন্তের কাজ সম্পন্ন করা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানাযায়।
আজ ৮ নভেম্বর (শুক্রবার) লাশের ময়না তদন্তের কাজ শেষ করে জুম্মার নামাজের পর পিতার বাড়ি জাতুকর্ণ পাড়ায় নিয়ে আসা হয় বলে খবর পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মামুন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে,তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,রীমার স্বামীর সাথে টাকা নিয়ে ঝামেলার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে রীমার লাশ উদ্ধারকারী এসআই জাহাঙ্গীর মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং ডাক্তার না থাকায় ময়না তদন্তের কাজ হয়নি।
তবে রীমার মোবাইল নাম্বারে কার কার সাথে কি আলাপ আলোচনা হয়েছে এসব বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে এসব অভিমানের কারনেই হয়তো আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। এ ব্যাপারে থানায় কোন অভিযোগ হয় নাই বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ
(ওসি)কবির হুসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে,তিনি ৩ দিনে ২জন নারী ও ১জন যুবক সহ ৩জনের লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।
এদিকে রীমা আক্তারের লাশটি গতকাল পোস্ট মর্টেম এর কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় গতকাল সারাদিন সারারাত লাশটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকে।
আজ ৮ নভেম্বর (শুক্রবার)জুম্মার নামাজের পর ময়না তদন্ত(পোস্ট মর্টেম) এর কাজ শেষ করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল থেকে তার পিত্রালয় ৩নং দক্ষিণ পূর্ব ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের জাতুকর্ণ পাড়ার(যোগী হাটি)নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে আসরের নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পাওয়া যায়।
এব্যাপারে ইউপি সদস্য আব্দু সালাম মিয়ার মুঠোফোন
(০১৭১৭-২৬৬৫৩৪)নাম্বারে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে,তার কোন সাড়া না পাওয়ায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।